বিসিএস ক্যাডার ছেলে চালাচ্ছেন বাবার মুদি দোকান

দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. শাহিন। তার বাবা মুদি দোকানি। মা সংসারের পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করেন। সেলাইয়ের কাজ করে উপার্জিত টাকা শাহিনের পড়াশোনায় খরচ করেছেন। আজ সেই মায়ের কষ্ট লাঘব হয়েছে। শাহিন ৪০তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে মেধা তালিকায় ১৭তম হয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভার তামাকপট্টি এলাকার মো. আসলাম ও নূরজাহান দম্পতির ছেলে মো. শাহিন ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় শাহিন ২০১০ সালে গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদরাসা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল গোপালপুর কলেজ থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন ২০১৭ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে অনার্স শেষ করেন। সেখান থেকেই উদ্যানতত্ত্বে প্রথম বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাবার দোকানে বসে দোকানদারি করছেন শাহিন। দোকানে আসা ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন। এর ফাঁকে ফাঁকে বই পড়ছেন। তাদের জরাজীর্ণ বসবাসের একটি ঘরের সামনের অংশে দোকান। পেছনের অংশে তাদের পড়াশোনার কক্ষ। আরেক থাকার কক্ষে মা নূরজাহান সেলাইয়ের কাজ করছেন।

এক সঙ্গে লাগানো দুটি পড়ার টেবিলে তারা তিন ভাই-বোন পড়াশোনা করেন। তাদের বাবা স্ট্রোক করায় এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না, ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। তার বড় ভাই দোকানে বসে যে টাকা উপার্জন করেন, সেই টাকায় তাদের সংসার চলে।

স্থানীয়রা বলেন, শাহিন লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে দোকানদারি করেছে। আমরা দেখেছি সে দোকানে বেচাকেনার পাশাপাশি বই পড়েছে। এখনো বাড়িতে এলে দোকানে বসে। তার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পেছনের গল্প খুবই করুণ। এ পরিবার থেকে কেউ বিসিএস ক্যাডার হবে এটা কল্পনাতেও ছিল না।

শাহিনের বড় ভাই তাওহীদ বলেন, ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে দোকানদারি করেছি। বাবা এখন কাজ করতে পারেন না, তাই আমি দোকান চালাই। ছোট ভাই শাহিন বাড়িতে এলেই দোকানে বসে। আমাদের মধ্যে সে সবচেয়ে মেধাবী।

শাহিনের মা নূরজাহান বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। সেলাই করে যে টাকা উপার্জন হতো সব টাকাই ছেলের পেছনে ব্যয় করতাম। যাতে সে উচ্চশিক্ষিত হতে পারে। ছেলেও অনেক কষ্ট করেছে। মায়ের কষ্ট ছেলে লাঘব করেছে। মা হিসেবে আমি খুবই গর্বিত ও আনন্দিত।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত শাহিন বলেন, আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। মা তোষক, মশারি, লেপ সেলাই করে যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন।

এছাড়া ছোট দোকানের আয় থেকে কোনো মতে সংসার চলত। স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করার পাশাপাশি দোকানদারি করে বাবাকে সহায়তা করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তেমন দোকানে বসতে পারিনি। এর মধ্যে বাবা অসুস্থ হওয়ায় বড় ভাই দোকান চালান। যখন বাড়িতে আসতাম তখন দোকানে বসতাম। শৈশব ও কিশোরে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমার লেখাপড়ার হাতেখড়ি আমার মায়ের কাছে। মা সব সময় সাহস যোগাতেন, বলতেন- আমি পারব।